নীল খামের চিঠি

 

প্রিয় মৌমিতা, 


      দীর্ঘ সাত বছর পর তোমাকে চিঠি লেখা শুরু করলাম। এই 7 বছরে চিঠি লেখার অভ্যাসটা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, মানুষতো অভ্যাসের দাস  তাই না বল? অফিসের উপরতলায় চিঠি পাঠিয়ে সুপারিশ করা ছাড়া আর চিঠি লেখার কোন প্রয়োজন নেই। অজানা কথাগুলো হয়তো এখন নিরুদ্দেশের পথের যাত্রী হয়ে গেছে, আজ আর চিঠিতে সেই কথা আসবে না। রঙিন কার্ড জমিয়ে তোমাকে লেখা চিঠিগুলো কি আজও যত্নে রেখেছো তোমার ওই টিনের ছোট্ট বাক্সটায়? নতুন নতুন নামে তোমাকে বিশেষিত করা... আজ আর কিছু নতুন ভাবতে পারছি না জানো? চিন্তা ভাবনা গুলো যেন বড় বড় বিল্ডিং এর তলায় চাপা পড়ে গেছে প্রতি রাতে খাবার পর বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় তোমাকে চিঠি লেখা টা কোন ড্রাগ বা হিরোইনের নেশা থেকে কোন অংশে কম ছিলনা। মনে আছে?... সবথেকে বেশি চিঠির শেষে তোমাকে উদ্দেশ্য করে ওই ছোট্ট চার লাইনের নতুন নতুন গানের সুরে বাঁধা কবিতার ছন্দের জন্য তুমি অপেক্ষা করতে। যাক বাস্তবের আঁধারে হারিয়ে যাওয়া অতীতের কথা এখন ছাড়ি। কল্পনার তরী অনেকদূর যে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার সাক্ষী হয়তো তুমি আমি দুজনেই, কিন্তু বাস্তবে তরীটা তৈরি করা খুবই শক্ত... তাই না?

     কেমন আছো তুমি এখন? তোমায় সেদিন শুভ্র পোশাকে দেখে খুব অবাক হয়ে, খানিকটা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কাছে আসার সাহস ছিলনা,পা থর থর করে কাঁপছিল,মনে হচ্ছিলো ভূমিকম্পে বোধ হয় সারা পৃথিবীটা কাঁপছে। কি এমন হয়েছিল যে তোমাকে সব রঙ বিসর্জন দিতে হলো? আমি তো জানতাম তুমি চির সুখি ছিলে, তোমার সুখে যেন আমার কষ্টের বিন্দুমাত্র আঁচ না লাগে তার জন্যই তো নিজেকে সমাজ থেকে গুটিয়ে বন্ধ ঘরে লুকিয়ে রাখা। ভালোবাসা মানে তো শুধু দেখে আসা স্বপ্ন গুলোকে বাস্তব করা নয়, বরং কাটিয়ে আসা সুখময় অতীত গুলো জাবর কাটা। শেষ খবর পেয়েছিলাম যখন তুমি মা হতে চলেছ-বিশ্বাস করো খুব খুশি হয়েছিলাম, সেদিন মন চাইছিল একটু তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি কিন্তু প্রকাশ্যে আসতে পারিনি পাছে তোমার কোন ক্ষতি হয়ে যায়? এখন কেমন আছে সে ?এখন হয়তো বছর তিনেক বয়স হয়েছে। দুষ্টু -মিষ্টি কথায় হয়তো ভরিয়ে দিচ্ছে তোমার সংসার। আচ্ছা তোমার মনে পড়ে সেই দিনের কথা কত স্বপ্নের জাল বুনে ছিলাম আমরা- একটানে সব জাল ছিড়ে তোমাকে বের করে নিয়ে গেল তোমার বাবা । আসলে কোন বাবাই বা চায় জীবনে চলার পথে গতিহীন বাউন্ডুলে একটা ছেলের সাথে তোমার জীবন জুড়তে? অনেক ভেবেই সেদিন তোমার থেকে দূরে সরার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। জানিনা আজ তুমি কেমন আছো? কিভাবে কাটছে তোমার ?স্বপ্ন দেখো আগের মত? উত্তেজনা চাপতে শিখেছ? ওহো এখনতো তুমি হয়তো অনেক পরিণত..... পরিণত মা হয়ে গেছো ।সেদিন তোমার মুখ দেখেই বুঝেছিলাম যে তোমার মুখে পরিণতির একটা স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে। যদিও জীবনের অনেক মূল্যবান জিনিস তুমি হারিয়ে ফেলেছ - ভালো মানুষগুলো সাথেই এত খারাপ হয় কেন বলতো ?তুমি তো চিরকালই একটা সম্পূর্ণ নারী ছিলে, কখনো কোনো খুঁত তোমাকে ছুঁতে পারেনি। যাইহোক চাওয়া-পাওয়া -হারানোর হিসেব-নিকেশ আজ থাক , আজ বরং অতীতের স্তুপে পড়ে না থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসি।

কেমন আছো তুমি বা তোমরা ?আর একটা কথা বলতে চাই, যেটা না বললেই নয়- হয়তো এই চিঠির উদ্দেশ্য সেটাই । জানিনা বলাটা উচিত কিংবা না- কিন্তু অনেক দ্বিধা নিয়েই বলছি,তুমি চাইলে আজও তোমার একাকিত্বের সাথী হতে চাই । আজও তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারি, শুধু স্বপ্ন নয় সেটা এবার বাস্তবে রূপ দিতেও পারি, তোমার ও তোমার সন্তানকে আমাদের সন্তান হিসেবে বড় করতে পারি। সব দ্বিধা কাটিয়ে তিনজন হাতে হাত রেখে বাঁচতে পারি ,সে সব সম্ভব কিনা একটু ভেবে দেখো। অনেক আশায় আজ চিঠিটা লিখলাম, ভেবনা তোমাকে পাওয়ার আশায় বরং অতীতের চাপা পড়া স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার আশায় । রংয়ের দুনিয়ায় তোমায় ফিরিয়ে  এনে তোমাকে রঙিন করে তুলবো- আর তারই প্রথম পদক্ষেপ তোমার প্রিয় রং নীল খামের এই চিঠি। একটা শক্ত মজবুত হাত তোমার দিকে বাড়িয়ে দিলাম , অপেক্ষায় রইলাম তোমার ওই নরম হাতটা আমার হাতে রাখবে। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম,যদিও সে স্বপ্নটা তিনজনকে ঘিরে ।আগের মতো আর তুমি আমি দুজনে মিলে দুজনের স্বপ্ন দেখবো না, তিনে মিলে এক হবো।

খুব অগোছালো হয়ে গেছে চিঠির ভাষাটা, অনভ্যাসের ফলে আগের মত ভাষা প্রয়োগ আর আসে না। তুমি ফিরে এসে গুছিয়ে লেখাটা ফিরিয়ে দিও।
............................................
.......…..................................
............................................
...........................................

অনেক চেষ্টা করলাম চিঠির শেষের ওই ছোট্ট চার লাইনের কবিতার ছন্দের জন্য। তোমাকে ছাড়া নতুন  কোন ছন্দ বাধা আর সম্ভব নয়। তাই ওই জায়গাটা মাঝখানে ফাঁকা রেখে দিলাম। খুব ভালো থেকো, তোমরা অপেক্ষায় রইলাম ।
                                            ইতি.........

।।

Comments

Popular posts from this blog

status of প্রেম

oboidho prem

মধ্যবিত্ত